পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১৬

তারকাঁটা এবং অপরিপক্ক দৃশ্যায়নের একটি গল্প

একনজরে ‘তাঁরকাটা’


কাহিনী চিত্রনাট্য সংলাপ: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ
সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকআরেফিন রুমি
গীতিকার অনুরূপ আইচ, মাহমুদ মঞ্জুর, কবির বকুল, জাহিদ আকবর, আরেফিন রুমি
অভিনয়শিল্পী: মৌসুমী, আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম, ডাঃ এজাজুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ


তারকাঁটার প্রথম যে বিষয়টি ভালো লেগেছে আরেফিন শুভ’র গেটআপ আর এন্ট্রি সিন. চমৎকার ছিলো। শহরের দুর্ধর্ষ মাস্তান চরিত্র হিসেবে এন্ট্রি হলেও পরবর্তীতে এত মারদাঙ্গা ভাব শুভ ধরে রাখতে পারেননি।

মৌসুমি নিজের বর্তমান সময়ের উপযোগী একটা ক্যারেক্টার করেছেন। কিন্তু নায়িকাসুলভ অভিনয় অার গ্ল্যামারস হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেন নি।

মৌসুমির মেয়ে চরিত্রের পিচ্চি বাবুকে দিয়ে আরো ভালো অভিনয় করানো যেত, কিন্তু কোথায় যেন খাপছাড়া লেগেছে।

মীমের কাছ থেকে আমি অভিনয় এর চাইতে গ্ল্যামারই বেশি আশা করি। সেটা এখানেও দেখেছি। তবে বড় শিল্পী হওয়ার পথে বড় কনসার্টে তার গ্ল্যামার কম ছিলো। পদ্মপাতার জলে মীমের অভিনয় কিছুটা ভালো লেগেছিলো। এখানে এসে আবারো অভিনয়ের খাতায় মার্কস বেশি দেবো না। 

শুভ’র অ্যাসিস্টেন্টের মধ্যে সিদ্দিক সাজার চেষ্টা লক্ষণীয়, তবে ততটা খারাপ হয় নি।

সিনেমায় আমি একটা জিনিস বুঝি নাই, তা হলো গান। সবগুলো একরকমই লেগেছে। প্রথমের গানটা আইটেম হলেও বিশাল বিরক্তিকর ছিলো। সিনেমা মিউজিক্যাল হলে এত গানে ভালো লাগতো। কিন্তু সিনেমা যে আসলে কি নিয়ে তা-ই বুঝি নাই। আন্ডারওয়ার্ল্ড না কি মিউজিক্যাল নাকি রোমান্টিক কিচ্ছু বুঝি নাই।

হালের ক্রেজ কিংবা ঝানু অভিনয়শিল্পী নিয়েও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে কিভাবে একটা ছবি ব্যর্থ হেয়ে যায় তার প্রমাণ তারকাঁটা।

ভিলেন হিসেবে ফারুক আহমেদ আর ডা. এজাজকে নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কৌতুককর ভিলেন হিসেবে তাঁরা অতুলনীয় হলেও এই সিরিয়াস হওয়া ভিলেন চরিত্রে তাদের ভালো লাগে নি। ডা. এজাজ উর্দু বলেন, নাকি বাংলা নাকি হিন্দি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাকে কি বিহারী চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে কি না জানি না।

ফারুক আহমেদ শুধুমাত্র হিহিহি করে হাসতেই ভিলেন হয়েছেন। তার কাজ কিডন্যাপ করে আনা পর্যন্ত। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, গ্রামের চোর ডাকাত কাউকে এনে শহরের টপ টেরর বানানো হয়েছে।

আর বাংলা সিনেমার কিছু বিষয় তো কমন; রেগুলারই থাকে।এই সিনেমায় মিস করেছি আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না টাইপ কথাবার্তা। নায়ক ইব্রাহীম যখন খুনের দায়ে গ্রেফতার হলেন, তখন তার প্রেমিকা বোন কেউই তাকে বিশ্বাস করলেন না। আজব ব্যাপার। যেই লোকটা গুলিবিদ্ধ তাকে পরে জ্যান্ত হতেও দেখা গেল। অথচ শুভ এই বিষয়ে কোন বাক্যব্যয়ও করলো না জেল থেকে বের হয়ে প্রতিশোধও নিলো না। কেবল টপ টেরর হয়ে রইলো। এই টপ টেররকে যখন আসলাম শেখ (ফারুক) বেঁধে রাখলো তখন মুসা ভাই (এজাজ) কোন কিছুই করলো না। আসলাম শেখের গুলি খেয়ে শুভ এসে মরলেন তার বোনের বাসায়, আসতেই যখন দিলো তাকে, উনি তো চাইলে হাসপাতালে যেতেই পারতেন। এই ফোনের যুগে কাউকে ফোনও করলেন না। অদ্ভুত।

দেশ সেরা গায়িকা কিডন্যাপড অথচ দেশের কেউ কোন তোয়াক্কাও করলো না। এটা কি। এত দুর্বল চিত্রনাট্য। থাক ভাই চিত্রনাট্যের কথা নিয়ে আর না আগাই।

একটা গানের মধ্যে আশিকি ফ্লেভার পেলাম, বাংলাদেশের বারে এভাবে মেয়েরা গান গায় কিনা জানতাম না।

ক্যামেরার পেছনের মানুষ আর চিত্রনাট্যের মানুষগুলো নিয়ে আলোচনায় আসি। যথারীতি দুর্বল নায়িকা ও নায়কের বোন। তাদের উদ্ধারে বার বার সুপারম্যান নায়ককে আসতে হয়। শেষমেশ নায়ক গুলিবিদ্ধ হলেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসে না। নায়িকা শপিং প্রিয়। বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তির চাইতে তার জনপ্রিয় হওয়ার আর ফেসবুকে ছবি দেয়ার ‘হাউশ’ বেশি। আইটেম গানে শুধু আইটেম গার্লের শরীরের বিশেষ কিছু অংশ দেখাতে হবে। এত তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়া যায় এই সিনেমা না দেখলে বুঝতাম না।

সিনেমার ফ্রেমিং ভালো হয় নি। ক্যামেরার কাজ ছিলো দুর্বল। কন্টিউনিউটির খুব অভাব। চোখে বারবার বাড়ি খায়।

আর সিনেমা যা-ই হোক বিজ্ঞাপন কিন্তু কম পাননি মুস্তফা কামাল রাজ। প্রাণ আপ বড় স্পন্সর, জায়গায় জায়গায় প্রাণ আপ। ভাটিকাকে স্পন্সর করার জন্য মৌসুমি তার বাচ্চাকে দিয়ে মাথায় তেল লাগায়। নায়িকা আইফোন না কিনে সিম্ফোনি কিনতে যায়। এরকম আরো কিছু।আমরা এখন বিশ্বায়নের এমন যুগে আছি যে শটে শটে বিজ্ঞাপন দেখতে হয়।

যাই হোক অনেক খারাপ থেকে একসময় ভালো কিছু আমরা পাবো। আমাদের আশায় বসতি। হ্যাপি মুভি ইটিং! 





শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬

কয়েকজন ভালো মানুষ (A few good man)

কাহিনী সংক্ষেপ: 
গুয়েনতানামো বে তে এক মেরিন সেনাকে হত্যা করে তার সাথের দুই মেরিন সেনা। বিচারের মুখোমুখি হয় তারা দুজন। তাদের অাইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় টম ক্রুজ ওরফে লেফটেন্যান্ট ড্যানিয়েল ক্যাফি, সাথে আছেন ডেমি মুর (জো গ্যালওয়ে) ও কেভিন পোলাক (স্যাম)।তো কীভাবে তারা উদ্ধার করবেন মেরিন সেনাদের।নাকি এই মামলায় তারা হেরে যাবেন। এটা পর্দায় দেখে নেয়াই ভালো। কোর্টরুম ড্রামা আমি বলতে গেলে তেমন দেখি নি। কিন্তু এটা দেখে আরো দেখার আগ্রহ জাগলো।

সিনেমার নাম ও কারা এই ভালো মানুষ:
আমি আসলে চরিত্র বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি।
এখানকার নেতিবাচক চরিত্রগুলোকেও নেতিবাচক বলার কোন উপায় ছিলো না। কারণ-
জ্যাক নিকলসন ওরফে কর্ণেল জেসাপ তার কর্তব্যনিষ্ঠা বা দৃঢ়তার দিকে তাকাই। তার জায়গা থেকে তিনিও ভালো মানুষ। সেনাদের কর্তব্যবোধ তৈরিতে কঠোর শাস্তি দিতেও তিনি পিছপা হন না।
তার ডানহাত বলা চলে লেফটেন্যান্ট কেনড্রিককে। 
সাথে আছেন মার্কিনসন।  বলিষ্ঠ ও সৎ এই সেনা কর্মকর্তা জেসাপের সহপাঠী ছিলেন। জেসাপের অনেক অন্যায় সিদ্ধান্তও তাকে মেনে নিতে হয়, কারণ তিনি অধ:স্তন। তাঁর আত্মহত্যা ছিলো অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। তবে তার চিঠি সান্তিয়াগো’র বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছেছে কি না তা দেখানো হয় নি।
সান্তিয়াগো এক তরুণ সেনা। সেনাবাহিনীর েকঠোর নিয়মের সাথে জীবনের মেলবন্ধন ঘটাতে না পারায় তার ভাগ্যে নেমে আসে দুর্গতি। বার বার ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেও সে গুয়েনতানামো থেকে বের হতে পারে নি। শেষমেশ সে মুক্তি পায় তবে তা জীবন থেকে মুক্তি। 
আর তাকে হত্যার অপরাধে অপরাধী হয় তাকে নিয়মতান্ত্রিকতায় নিতে চাওয়া দুই অফিসার- ডসন ও ডাউনীকে। ডসন ছিলো প্লাটুন কমান্ডার, ডাউনী তার অধ:স্তন। ডাউনী এতই কমান্ডিং অফিসারকে মেনে চলে যে ডসনের অনুমতি ছাড়া সে কিছুই বলে না। আর ডসনকে দেখা যায় সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়মনীতির প্রতি অবিচল। 
এবার আসি সত্যিকারের ভালো মানুষের কথায়। 
লেফটেন্যান্ট ড্যানিয়েল হার্ভাড স্নাতক, যার বাবা ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী। ডসন-ডাউনীর এই মামলাই হলো তার জীবনের প্রথম মামলা। তার কাজ ছিলো ডসন-ডাউনিকে অপরাধী প্রমাণ করা। কিন্তু তার সহকারী লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জো গ্যালওয়ের বলিষ্ঠতায় ড্যানি তার অব্স্থান থেকে সরে আসে। ড্যানিয়েল-গ্যালওয়ের দ্বন্দ্ব বা একই সাথে তাদের পরষ্পরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এগুলোও ছিলো এর মধ্যে। 

প্লট:
অ্যারন সরকিনের উপন্যাস থেকে অ্যাডাপ্ট করা সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন সরকিন নিজেই। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মিলিটারি নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তা-ই আসলে মূল উপজীব্য। এই দুটো বিষয় ফুটে উঠেছে সিভিলিয়ন থেকে মিলিটারিতে জয়েন করা টম ক্রুজ আর মিলিটারি ব্যাকগ্রাউন্ডের জ্যাক নিকলসনের অভিনয় আর সংলাপের মধ্য দিয়ে। 

কাস্টিং:
ক্রুজ সাহেবের মাস্টার পিস বলা যায়। উনি যে গোয়েন্দা ছাড়াও আইনজীবী হতে পারে এটা জানা ছিলো না। সাথে আছেন ডেমি মুর। ডেমি মুর সম্পর্কে তেমন জানি না। তবে তার অভিনয় আমার খারাপ লাগে নি। 

দ্য শাইনিং সাহেব জ্যাক নিকলসনের অসাধারণ অভিনয় তো আছেই। মনে হয়েছে পজিটিভ প্রটাগোনিস্টের চাইতে নেগেটিভরাই বেশি শক্তিশালী ও সক্রিয়। 

পরিচালক
চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন রবার্ট রেইনার। এই পরিচালকের খুব বেশি চলচ্চিত্র দেখা হয় নি। তবে যে তিনটা দেখলাম তা একেবারে মাস্টার পিস- উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট কিংবা হোয়েন হ্যারি মেটস স্যালি আর আমার মোস্ট ফেভারেট স্লিপলেস ইন সিয়াটল। একেকটা একেক রকম মনে হয়। এটা তো আরো ভিন্ন। 

সংলাপ:
জ্যাক নিকলসনের অসাধারণ সব ডায়ালগ ছবির শক্তিশালী একটি দিক। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, নিকলসনের ‘ইউ কান্ট হ্যান্ডেল দ্য ট্রুথ’ হলো সেরা ১০০ উক্তির তালিকায় ২৯ তম। 




ক্যামেরা ও সম্পাদনা:
সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন রবার্ট রিচার্ডসন আর সম্পাদনায় রবার্ট লেইটন। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি নেভাল বেসকেই ছবিতে দেখানো হয়েছে গুয়েনতানামো বে হিসেবে। যদিও গুগল মামা জানানোর আগে আমার একবারও মনে হয় নি সেটা গুয়েনতানামো বে। রিচার্ডসনের সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো অসাধারণ। মন্তাজগুলো বিশেষ করে সান্টিয়াগোর চিঠির বিষয়গুলো, তার মৃত্যুদৃশ্য। 

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

I am the master of my fate, I am the captain of my soul.




      

I am the master of my fate,
      I am the captain of my soul.

এই দুটি অসাধারণ লাইন জানা হতো না ইনভিকটাস সিনেমা না দেখলে। পরে জানলাম কবির নাম উইলিয়াম আর্নেস্ট হেনলি। কবিতার নাম ইনভিকটাস, সিনেমার নামও ইনভিকটাস। মোটামুটি কোন রকম পূর্বানুমান ছাড়া সিনেমা দেখা শুরু করলাম।

দেখলাম বস মরগ্যান ফ্রিম্যান, তারপর দেখি ম্যাট ডেমন। সিনেমা দেখা শেষে দেখলাম এটা ক্লিন্ট ইস্টউডের সিনেমা। অদ্ভুত। এত বিখ্যাত এক ফ্রেমে থাকলে কেমনে কি। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার আইএমডিবিতে রেটিং ৭.৪। কম হয়ে গেল!!!!!!!!!!!

অ্যাপার্থিড বা বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হবার প্রথম মেয়াদে ম্যান্ডেলা যে অসাধারণ নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা আসলেই অনন্য। একদিকে দেশনেতা হিসেবে ম্যান্ডেলা রূপী মরগ্যানের ছোট ছোট পদক্ষেপ, আর অন্যদিকে স্প্রিংবুক রাগবি দলের অধিনায়ক হিসেবে ফ্রাসোয়া পিনার রূপী ম্যাট ডেমনের দলকে উজ্জীবিত করার কৌশল। একদিকে সাদা মানুষ আর একদিকে কালো মানুষ। দুজনই শীর্ষ পদে। একজনের হাতে দেশ রক্ষা আর আরেকজনের হাতে পিছিয়ে পড়ে দলকে শিরোপা জেতানোর লড়াই। দুটি গল্প চলেছে সমান্তরালে।






রাগবি নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি অন্য দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ আর নিজ দেশের সাদা-কালোদের এক করার চিন্তা এ দুয়ে মিলে ম্যান্ডেলার মনস্তত্ত্ব। ম্যান্ডেলা রোবেন আইল্যান্ডে যে সেলে বন্দী ছিলেন সেখানে গিয়ে ফ্রাঁসোয়া’র অনুভূতি। মাঝে মাঝেই ম্যান্ডেলাকে অনুভব করা অসাধারণ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ার্ল্ড রাগবি’র ফাইনাল ম্যাচের আগে ফ্রাসোয়া বলছেন- ৩০ বছর যারা তাকে আটকে রেখেছে, কীভাবে তাদের ক্ষমা করলেন।

ম্যান্ডেলা নিজের নিরাপত্তাবাহিনীতেও নিয়োগ দিয়েছেন সাদা-কালো উভয়পক্ষকেই। ম্যান্ডেলার এই প্রক্রিয়া তখনই সফল হয় যখন দেখা যায়, রাগবি ট্রফি ধরে আছে একটি সাদা হাত আর একটি কালো হাত।

রবিবার, ১৮ মে, ২০১৪

শুনতে কি পাও: আমার দেখা একমাত্র ডকুফিকশন এবং জেন্ডার সংবেদনশীলতা



একনজরেশুনতে কি পাও 
পরিচালক: কামার আহমাদ সাইমন
প্রযোজক: সারা আফরীন

চিত্রনাট্যকার: কামার আহমাদ সাইমন
চিত্রগ্রাহক: কামার আহমাদ সাইমন
সম্পাদক: সৈকত শেখরেশ্বর রায়
বণ্টনকারী: ক্যাট ডক্স
মুক্তি: ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ (বাংলাদেশ)
দৈর্ঘ্য: ৯০ মিনিট

কাহিনীসংক্ষেপ:
২০০৯ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বিধ্বস্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার সুতারখালি গ্রাম তার বাসিন্দা একটি পরিবারের জীবনযাপনের ঘটনা নিয়েই শুনতে কি পাও দুর্যোগ উপদ্রুত উপকূলের মানুষের মানবেতর জীবনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকের করুণা দীর্ঘশ্বাস উদ্রেকের কোনো চেষ্টা ছবিতে নেই, বরং আছে দুর্যোগবিধ্বস্ত জনপদ বিষয়ে একটি বিকল্প বয়ান তৈরির উদ্যোগ পরিচালক জোর দিয়েছেন অসীম পরাক্রমশালী প্রকৃতির পাশে ক্ষুদ্র মানুষের সীমাহীন শক্তির ওপর আইলাবিধ্বস্ত ছবির মানুষগুলো যেন গ্রীক পুরাণের প্রমিথিউসের আগুন লাগা একেকজন আদিম মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে যৌথ উদ্যোগে তারা তৈরি করছে তাদের দ্বিতীয় প্রকৃতি দলবেঁধে ঘুরিয়ে দিচ্ছে নদীর গতিপথ, নিচ্ছে খাবার, বাসস্থান আশ্রয়ের মতো একেবারে আদিম চাহিদাগুলো পূরণের উদ্যোগ জীবনের শেষ সম্বল হারানো এই জনপদের মেয়েরা অতীত প্রেমের স্মৃতি নিয়ে আড্ডা দেয়, নতুন শাড়ি পরে; পুরুষেরা গান শোনে, আয়োজন করে খেলার প্রতিযোগিতা সমান্তরালে শুনি এক দম্পতির ব্যক্তিগত গল্পও, যাদের সদ্য গড়ে তোলা সংসার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে আইলার আঘাতে সেই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে পৌরাণিক পাখির মতো ফুঁড়ে উঠতে দেখি রাখী নামের মেয়েটিকে রাখী নিজে স্কুলে পড়ায় আবার স্বপ্ন দেখে কলেজে ভর্তি হবার ঋণ নিয়ে সংসারের প্রয়োজনগুলো মেটাবার চেষ্টা করে কিন্তু স্কুলে রাখী যে দেশপ্রেমের শিক্ষা দেয়, বাস্তবে দেশের কাছ থেকে তেমন কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে সবাই ভারতে যাবার কথাও ভাবে কিন্তু সৌমেন নিজের সবকিছু ছেড়ে যেতে রাজি হয় না এই বিষম বাস্তবতায় ন্যূনতম উপকরণ দিয়েই রাখী চমৎকার বজায় রাখে তার গৃহিণীপনা, সন্তানকে মায়ায় স্বামীকে দেখায় নতুন দিনের স্বপ্ন নিজের সংসার ছাপিয়ে দায়িত্ব নেয় বিধ্বস্ত  জনপদের শিশুদের শিক্ষারও ছবির আরেকটি ব্যতিক্রমী মাত্রা শিশুর চোখ দিয়ে দুর্যোগকে দেখার চেষ্টা এমন দুর্গত পরিস্থিতিতে শিশুরা কী করে উদ্যাপন করে তাদের শৈশব, ছবিটি তার খোঁজ দেয় আমাদের বিধ্বস্ত সেই গ্রামে হতদরিদ্র মানুষকে ত্রাণ দিতে উপস্থিত হয় রাষ্ট্রও কিন্তু প্রাকৃতিক দুযোর্গে সবাই যখন একাকার, তখন কে হতদরিদ্র আর কে নয় হারিকেনের আলো-আঁধারিতে চা-খানায় বসে গ্রামের মানুষ এই ধাঁধার জন্ম দেয় রিলিফের ভিড়ে বিরক্ত, পানির অভাবে তৃষ্ণার্ত দুর্গতদের ক্ষোভের আঁচটা পাওয়া যায় সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায় আমরা দেখি, এই চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দাঁড়িয়েও ভাঙা স্কুলঘরে শিশুরা উচ্চ স্বরে পাঠ নেয় রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের দায়িত্ব, তারা দেশপ্রেমের গান গায় একটা চাপা বেদনা কৌতুক মিশে থাকে এসব দৃশ্যে

পুরষ্কার সম্মাননা
  •  ২০১৩ সালের এপ্রিলে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপের অন্যতম প্রামাণ্যচিত্র উৎসব সিনেমা দ্যু রিলের ৩৫তম আসরে সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁপি
  • ফিল্ম সাউথ এশিয়ার-এওয়ার্ড’, ২০১২ তে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন প্রামাণ্য উৎসব ডক-লাইপজিগের (জার্মানী) ৫৫তম আসরের উদ্বোধনী-ছবি এবং বিশ্বের বৃহত্তম প্রামাণ্য উৎসব ইডফার (নেদারল্যান্ডস্) ২৫তম আসরে আনুষ্ঠানিক ছবির আমন্ত্রণ
  • এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন মর্যাদাপূর্ণ মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (মিফ)- শ্রেষ্ঠ সর্বোচ্চ পুরষ্কারস্বর্ণশঙ্খ’ (গোল্ডেন কঞ
  • ছয়টি উৎসবে আমন্ত্রণ: উৎসবগুলো হলো জাপানেরইয়ামাগাতার’ (১০-১৭ অক্টোবর), অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসবঅ্যান্টেনা’ (- অক্টোবর), যুক্তরাজ্যেরটেক ওয়ান অ্যাকশন’ (২৭ সেপ্টেম্বর-১২ অক্টোবর), তুরস্কের২০তম গোল্ডেন বোল চলচ্চিত্র উৎসব’ (১৬-২২ সেপ্টেম্বর), কসোভোরপ্রি-ফিল্ম ফেস্ট’ (২০-২৮ সেপ্টেম্বর) উপমহাদেশের অন্যতম প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবফিল্ম সাউথ এশিয়া’ (- অক্টোবর)
জেন্ডার সংবেদনশীলতা-অসংবেদনশীলতা:

সংবেদনশীলতা:
দুর্যোগপ্রবণ অবস্থায় নারী-পুরুষের দুরাবস্থা:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা প্রলয় নারী-পুরুষ বোঝে না কারণেই দেখা যায়, পুরুষ-নারী উভয়ই প্রাকৃতিক শক্তির কাছে হার মেনে নিজের নির্মম ভাগ্যকে মেনে নিচ্ছে ধনী-গরীব সবাই এককাতারে সবাই তাদের স্বীয় ঠিকানা হারিয়ে দূরে আশ্রয় গ্রহণ করেছে পানি আনতে গিয়ে বিশাল এক লাইন দেখা যায় যারা পানি পায়না তাদের বলতে শোনা যায়, বিষ কিনে দাও, বিষ খেয়ে মরে যাই সৌমেন যখন পরিবারের জন্য খাবার আনতে যায়, তখন দেখা যায়, পুরুষরা নারীদেও লাইন ভেঙ্গে সেদিক দিয়ে গিয়ে খাবার আনতে যায় কিন্তু যতই দুর্যোগগ্রস্ত হোক না কেন, সেখানকার নারী-পুরুষের আলাদা থাকার ব্যাপারটা চোখে পড়ার মতো প্রথাগত জেন্ডার মিকার কোন পরিবর্তন ঘটে না যত কিছ হোক না কেন সৌমেন লাইন করার সময় রিলিফ নেয়ার সময় এক নারী বলে ওঠেমাইয়ালোকের বার (লাইন) দিয়া আইস না
 
নারী-পুরুষের সমঅংশগ্রহণ:
নারী-পুরুষ উভয়কে বাঁধের কাজে সমানভাবে কাজ করতে দেখা যায় আর ঘর-গৃহস্থালীর কাজ তো রয়েছেই গ্রামের মেম্বারদের সাথে আলোচনায় এক নারীকেও দেখা যায় যদিও সে কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে না তারপরও অংশগ্রহণ কিছুটা হলেও দেখা গেছে সেই নারীকে আমরা ভোটাধিকারের ব্যাপারেও কথা বলতে শুনি

অসংবেদনশীলতা

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ:
সৌমেনসহ বাকি পুরুষদের বাইরে কাজ করতে দেখা যায় ঘর-গৃহস্থালির কাজ তারা তেমন একটা করে না অন্যদিকে মেয়েরা ঘরে বাইরে সমানভাবে কাজ করে মেয়েদেও দেখা যায় লম্বা লাইন ধরে পানি আনে, রান্না করে, বাচ্চার দেখাশোনা করে আবার মাছ ধরে এমনকি মেয়েদেও বাঁধে কাজ করতেও দেখা যায় এত কিছুর পরও পরিবারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর মিকায় পুরুষকেই দেখা যায় রাখী শিক্ষিত এবং গ্রামের স্কুলে পাঠদানের কাজ করে একই সাথে ঘরে বাইরে সমান অবদান রাখার পরও সৌমেন ঘরে আসলে রাখিকেও যাবতীয় ফুট-ফরমাশ খাটতে দেখা যায় সে বলেসাবান এনে দাও”, “তরকারি কি একটাই রেঁধেছ নাকি?” অর্থাৎ নারীর চিরাচরিত জেন্ডার ভূমিকার সাথে সাথে তাকে ঘরের বাইওে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে পুরুষদের তুলনায় বেশি কাজ করলেও দেখা যায়, পুরুষই আদতে পরিবারের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে

নারী শিশুর সম্পর্ক
 দেখা যায়, পরিবারের পুরুষ বা আয় করা সদস্যরা শিশুদের লালন পালনে তেমন একটা মিকা রাখছে না শিশুকে লালন-পালন, পড়াশোনা করানোর কাজ সব নারীরাই করছে মা রাখীর সাথে বছরের শিশু রাহুলকে বেশি সময় কাটাতে দেখা যায় সৌমেন যখন ঘরে থাকে না, তখন রাখীর একমাত্র সঙ্গী হয় রাহুল বাবা সৌমেনের সাথে রাহুলের সম্পর্ক মায়ের মতো ঘনিষ্ঠ নয়
নারীর মতামত অগ্রাহ্য করা:
সৌমেন রাখীর মতামতকে গুরুত্ব দেয় না রাখী এলাকার অন্যান্যদের থেকে একটু আলাদা কিছুটা পড়াশোনা জানে, গান জানে কিন্তু স্বামী সৌমেনের কাছে এসব ব্যাপার উপেক্ষিত রাখীর মতামতকে সৌমেন গুরুত্ব দিতে চায় না বার বার তাকে মাতব্বর বলে সৌমেন মোবাইলে কথা বলা রাখির কাছে অনেক শখের বিষয় বারবার সৌমেনের মোবাইলে কথা বলতে গেলে সৌমেন রাগ দেখায় নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে বাক-বিতন্ডা লক্ষ্য করা যায়
সৌমেন বলে: “মোবাইল করতি গেলে মোবাইল করতে চাওয়া মাতব্বরী অর্থাৎ সৌমেনের কাছে মোবাইল কেবল পুরুষরাই ব্যবহার করে কিন্তু সে যে মোবাইল ব্যবহার করছে তা রাখীরই মোবাইলের মাধ্যমে প্রতীকি অর্থে বোঝানো হচ্ছে স্বামী চাইলেই স্ত্রীর সম্পত্তিতে অধিকার রাখে কিন্তু স্ত্রী রাখে না পরে রাখীকে দেখা যায়, জমানো টাকা দিয়ে আরেকটি ফোন কিনতে নিয়ে কথা শোনাতেও ছাড়ে না সৌমেন তাকে কোটিপতির কইন্যা বলে অভিহিত করে সৌমেন রাখীকে অভিযোগ জানায়, মাথার যন্ত্রণায় মরি যাই, ওষুধ আনি দিতে পারো নি থেকে বোঝা যায়, রাখীর অনেক মৌলিক চাহিদাই সৌমেন মেটাতে পারে না এমনকি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পরও তাকে সৌমেনের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে শুধু তাই নয়, নিজের টাকা কিভাবে খরচ করবে সেই জবাবদিহিতাও করতে হচ্ছে সৌমেনের কাছে বাঁধ হওয়ার পর নতুন ঘর বাঁধে সৌমেন রাখী সেখানেও রাখীর মতামত অগ্রাহ্য করতে দেখা যায় সৌমেনকে রাখি তাকে আগে রান্নাঘর খুলতে নিষেধ করলে সে বলে, “যা পারো তাই করো গে তারপর - বলেবিল্ডিং দিও নে তুমি অর্থাৎ সৌমেন সবসময় রাখীকে ছোট করে দেখার মানসিকতা পোষণ করে
 
নারীরা গল্পপ্রিয়, পুরুষরা কর্মঠ:

দেখা যায়, পুরুষরা যেখানে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে চিন্তিত, রিলিফ কিংবা নতুন বাড়িঘর নিয়ে চিন্তিত সেখানে নারীদের দেখা যায়, অবসর সময়ে লুডু খেলতে রাখীকেও গল্প করতে দেখা যায় তাদেও গল্পের বিষয় বিয়ের পূর্বের প্রেম বা বিয়ের পওে স্বামীর সোহাগ -ির বাইরে তাদের কোন গল্পই নেই রাখীকে নিজের শখের জন্য টাকা খরচ করতে দেখা যায়- মোবাইল কিংবা আয়না কিনতে গেলে এর প্রমাণ পাওয়া যায় অর্থাৎ নারীরা চরম দারিদ্র্যেও মধ্যেও স্বার্থপরের মতো নিজের ভোগের কথা চিন্তা করে
 
শরীর প্রদর্শন:
তথাকথিত বাণিজ্যিক ধারার বাইরে হলেও এই চলচ্চিত্রেও মেল গেজ থিওরি সমান কার্যকর কারণ ক্যামেরার পেছনের চোখ একজন পুরুষের কারণেই আমরা হয়তো রাখীর বৃষ্টিতে ভেজার দৃশ্য দেখি ব্যালেন্স আনার জন্য পরিচালক বেশ কয়েকবার সৌমেনের অর্ধ-নগ্ন শরীরও দেখি

নারীদের শ্রম মূল্যহীন
বাঁধে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করলেও দেখা যায়, কাজ যখন প্রায় শেষ তখন মেম্বার বলে, “ যারা যাতি চায়, তারা যাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে যাদের নিয়োগ নেই তারা যাবে না অর্থাৎ কর্মী ছাঁটাইয়ের শুরুতেই নারী শ্রমিকদের বাদ দেয়ার জন্য চিন্তা করা হয়
নেপথ্য কণ্ঠে পুরুষ:
জোরালো নেপথ্য কণ্ঠ হিসেবে পুরুষকে ব্যবহার করা হয়েছে


সংলাপে অসংবেদনশীলতা:
রাখী যখন মোবাইল কিনতে যায়, তখন এক দোকানী আরেক দোকানীকে বলেএই মালটা একটু খোল এখানে মাল বলতে মোবাইলকে বোঝানো হচ্ছে কিন্তু কিছুটা অসংবেদী ভাষাও ব্যবহার করা হচ্ছে
লুডু খেলার সময় কোন একটা টার্ম হিসেবে বলেবউয়ের লোভ আবার বলে চারজনে গা গরম হবে অন্য নারীদের সাথে গল্প করতে গেলে রাখীও অশালীন কথা বলে নূপুর নামে এক নারী যখন বলেঝগড়া হলি প্রেম বাড়েতখন রাখী বলেবাল না বোকাচুদা পাইয়েছ ......... ড্যামনার দল এমনকি নূপুরকে বলেনূপুর অন্তত সেঞ্চুরি করিছে কয়েক ছাওয়ালের সাথে আদান-প্রদান করিছেএমনকি রাখীকে কিছটা অহংকার প্রকাশ করতেও দেখা যায়, “যার সাথে করেছি তাকেই বিয়ে করেছি, ৫টার সাথে করে একটাকে বিয়ে করি নি তো অর্থাৎ একাধিক পুরুষের সাথে প্রেম তাদের কাছে মন্দকাজ হিসেবে ধরা দিচ্ছে
আরেক নারী বলে, “তুমি পাছা দিয়েছ আমার দিকে, পাঙা দিলে আমার দিকে বড় পাছাটা সরাও দিকিএভাবে এক নারী আরেক নারীর সাথে মজা করে
বাঁধের কাজে যাওয়ার সময় দুইজন লোকের কথোপকথন:
হাঁতুর এনেছ
-              না আনি নি, হারিয়ে ফেলেছি
তখন আরেকজন বলে ওঠে, “এরা একসময় বৌকেও হারিয়ে ফেলবে
এখানে নিজের স্ত্রীকে বস্তুর সাথে তুলনা করতেও তারা ছাড়ে নি
 
গানে অসংবেদনশীলতা:
বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের মতো অনেক গান না থাকলে দু-একটি গান রয়েছে এর মধ্যেনিশি হলো ভোর, বাসনা ভ্রমরগানটির কথা বেশ অসংবেদনশীল