পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৯ জুলাই, ২০১৬

তারকাঁটা এবং অপরিপক্ক দৃশ্যায়নের একটি গল্প

একনজরে ‘তাঁরকাটা’


কাহিনী চিত্রনাট্য সংলাপ: মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ
সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালকআরেফিন রুমি
গীতিকার অনুরূপ আইচ, মাহমুদ মঞ্জুর, কবির বকুল, জাহিদ আকবর, আরেফিন রুমি
অভিনয়শিল্পী: মৌসুমী, আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম, ডাঃ এজাজুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ


তারকাঁটার প্রথম যে বিষয়টি ভালো লেগেছে আরেফিন শুভ’র গেটআপ আর এন্ট্রি সিন. চমৎকার ছিলো। শহরের দুর্ধর্ষ মাস্তান চরিত্র হিসেবে এন্ট্রি হলেও পরবর্তীতে এত মারদাঙ্গা ভাব শুভ ধরে রাখতে পারেননি।

মৌসুমি নিজের বর্তমান সময়ের উপযোগী একটা ক্যারেক্টার করেছেন। কিন্তু নায়িকাসুলভ অভিনয় অার গ্ল্যামারস হওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেন নি।

মৌসুমির মেয়ে চরিত্রের পিচ্চি বাবুকে দিয়ে আরো ভালো অভিনয় করানো যেত, কিন্তু কোথায় যেন খাপছাড়া লেগেছে।

মীমের কাছ থেকে আমি অভিনয় এর চাইতে গ্ল্যামারই বেশি আশা করি। সেটা এখানেও দেখেছি। তবে বড় শিল্পী হওয়ার পথে বড় কনসার্টে তার গ্ল্যামার কম ছিলো। পদ্মপাতার জলে মীমের অভিনয় কিছুটা ভালো লেগেছিলো। এখানে এসে আবারো অভিনয়ের খাতায় মার্কস বেশি দেবো না। 

শুভ’র অ্যাসিস্টেন্টের মধ্যে সিদ্দিক সাজার চেষ্টা লক্ষণীয়, তবে ততটা খারাপ হয় নি।

সিনেমায় আমি একটা জিনিস বুঝি নাই, তা হলো গান। সবগুলো একরকমই লেগেছে। প্রথমের গানটা আইটেম হলেও বিশাল বিরক্তিকর ছিলো। সিনেমা মিউজিক্যাল হলে এত গানে ভালো লাগতো। কিন্তু সিনেমা যে আসলে কি নিয়ে তা-ই বুঝি নাই। আন্ডারওয়ার্ল্ড না কি মিউজিক্যাল নাকি রোমান্টিক কিচ্ছু বুঝি নাই।

হালের ক্রেজ কিংবা ঝানু অভিনয়শিল্পী নিয়েও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে কিভাবে একটা ছবি ব্যর্থ হেয়ে যায় তার প্রমাণ তারকাঁটা।

ভিলেন হিসেবে ফারুক আহমেদ আর ডা. এজাজকে নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কৌতুককর ভিলেন হিসেবে তাঁরা অতুলনীয় হলেও এই সিরিয়াস হওয়া ভিলেন চরিত্রে তাদের ভালো লাগে নি। ডা. এজাজ উর্দু বলেন, নাকি বাংলা নাকি হিন্দি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাকে কি বিহারী চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে কি না জানি না।

ফারুক আহমেদ শুধুমাত্র হিহিহি করে হাসতেই ভিলেন হয়েছেন। তার কাজ কিডন্যাপ করে আনা পর্যন্ত। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, গ্রামের চোর ডাকাত কাউকে এনে শহরের টপ টেরর বানানো হয়েছে।

আর বাংলা সিনেমার কিছু বিষয় তো কমন; রেগুলারই থাকে।এই সিনেমায় মিস করেছি আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না টাইপ কথাবার্তা। নায়ক ইব্রাহীম যখন খুনের দায়ে গ্রেফতার হলেন, তখন তার প্রেমিকা বোন কেউই তাকে বিশ্বাস করলেন না। আজব ব্যাপার। যেই লোকটা গুলিবিদ্ধ তাকে পরে জ্যান্ত হতেও দেখা গেল। অথচ শুভ এই বিষয়ে কোন বাক্যব্যয়ও করলো না জেল থেকে বের হয়ে প্রতিশোধও নিলো না। কেবল টপ টেরর হয়ে রইলো। এই টপ টেররকে যখন আসলাম শেখ (ফারুক) বেঁধে রাখলো তখন মুসা ভাই (এজাজ) কোন কিছুই করলো না। আসলাম শেখের গুলি খেয়ে শুভ এসে মরলেন তার বোনের বাসায়, আসতেই যখন দিলো তাকে, উনি তো চাইলে হাসপাতালে যেতেই পারতেন। এই ফোনের যুগে কাউকে ফোনও করলেন না। অদ্ভুত।

দেশ সেরা গায়িকা কিডন্যাপড অথচ দেশের কেউ কোন তোয়াক্কাও করলো না। এটা কি। এত দুর্বল চিত্রনাট্য। থাক ভাই চিত্রনাট্যের কথা নিয়ে আর না আগাই।

একটা গানের মধ্যে আশিকি ফ্লেভার পেলাম, বাংলাদেশের বারে এভাবে মেয়েরা গান গায় কিনা জানতাম না।

ক্যামেরার পেছনের মানুষ আর চিত্রনাট্যের মানুষগুলো নিয়ে আলোচনায় আসি। যথারীতি দুর্বল নায়িকা ও নায়কের বোন। তাদের উদ্ধারে বার বার সুপারম্যান নায়ককে আসতে হয়। শেষমেশ নায়ক গুলিবিদ্ধ হলেও কেউ তাকে বাঁচাতে আসে না। নায়িকা শপিং প্রিয়। বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তির চাইতে তার জনপ্রিয় হওয়ার আর ফেসবুকে ছবি দেয়ার ‘হাউশ’ বেশি। আইটেম গানে শুধু আইটেম গার্লের শরীরের বিশেষ কিছু অংশ দেখাতে হবে। এত তাড়াতাড়ি প্রেমে পড়া যায় এই সিনেমা না দেখলে বুঝতাম না।

সিনেমার ফ্রেমিং ভালো হয় নি। ক্যামেরার কাজ ছিলো দুর্বল। কন্টিউনিউটির খুব অভাব। চোখে বারবার বাড়ি খায়।

আর সিনেমা যা-ই হোক বিজ্ঞাপন কিন্তু কম পাননি মুস্তফা কামাল রাজ। প্রাণ আপ বড় স্পন্সর, জায়গায় জায়গায় প্রাণ আপ। ভাটিকাকে স্পন্সর করার জন্য মৌসুমি তার বাচ্চাকে দিয়ে মাথায় তেল লাগায়। নায়িকা আইফোন না কিনে সিম্ফোনি কিনতে যায়। এরকম আরো কিছু।আমরা এখন বিশ্বায়নের এমন যুগে আছি যে শটে শটে বিজ্ঞাপন দেখতে হয়।

যাই হোক অনেক খারাপ থেকে একসময় ভালো কিছু আমরা পাবো। আমাদের আশায় বসতি। হ্যাপি মুভি ইটিং! 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন