পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৬

কয়েকজন ভালো মানুষ (A few good man)

কাহিনী সংক্ষেপ: 
গুয়েনতানামো বে তে এক মেরিন সেনাকে হত্যা করে তার সাথের দুই মেরিন সেনা। বিচারের মুখোমুখি হয় তারা দুজন। তাদের অাইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় টম ক্রুজ ওরফে লেফটেন্যান্ট ড্যানিয়েল ক্যাফি, সাথে আছেন ডেমি মুর (জো গ্যালওয়ে) ও কেভিন পোলাক (স্যাম)।তো কীভাবে তারা উদ্ধার করবেন মেরিন সেনাদের।নাকি এই মামলায় তারা হেরে যাবেন। এটা পর্দায় দেখে নেয়াই ভালো। কোর্টরুম ড্রামা আমি বলতে গেলে তেমন দেখি নি। কিন্তু এটা দেখে আরো দেখার আগ্রহ জাগলো।

সিনেমার নাম ও কারা এই ভালো মানুষ:
আমি আসলে চরিত্র বিশ্লেষণ করতে যাচ্ছি।
এখানকার নেতিবাচক চরিত্রগুলোকেও নেতিবাচক বলার কোন উপায় ছিলো না। কারণ-
জ্যাক নিকলসন ওরফে কর্ণেল জেসাপ তার কর্তব্যনিষ্ঠা বা দৃঢ়তার দিকে তাকাই। তার জায়গা থেকে তিনিও ভালো মানুষ। সেনাদের কর্তব্যবোধ তৈরিতে কঠোর শাস্তি দিতেও তিনি পিছপা হন না।
তার ডানহাত বলা চলে লেফটেন্যান্ট কেনড্রিককে। 
সাথে আছেন মার্কিনসন।  বলিষ্ঠ ও সৎ এই সেনা কর্মকর্তা জেসাপের সহপাঠী ছিলেন। জেসাপের অনেক অন্যায় সিদ্ধান্তও তাকে মেনে নিতে হয়, কারণ তিনি অধ:স্তন। তাঁর আত্মহত্যা ছিলো অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। তবে তার চিঠি সান্তিয়াগো’র বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছেছে কি না তা দেখানো হয় নি।
সান্তিয়াগো এক তরুণ সেনা। সেনাবাহিনীর েকঠোর নিয়মের সাথে জীবনের মেলবন্ধন ঘটাতে না পারায় তার ভাগ্যে নেমে আসে দুর্গতি। বার বার ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করেও সে গুয়েনতানামো থেকে বের হতে পারে নি। শেষমেশ সে মুক্তি পায় তবে তা জীবন থেকে মুক্তি। 
আর তাকে হত্যার অপরাধে অপরাধী হয় তাকে নিয়মতান্ত্রিকতায় নিতে চাওয়া দুই অফিসার- ডসন ও ডাউনীকে। ডসন ছিলো প্লাটুন কমান্ডার, ডাউনী তার অধ:স্তন। ডাউনী এতই কমান্ডিং অফিসারকে মেনে চলে যে ডসনের অনুমতি ছাড়া সে কিছুই বলে না। আর ডসনকে দেখা যায় সেনাবাহিনীর কঠোর নিয়মনীতির প্রতি অবিচল। 
এবার আসি সত্যিকারের ভালো মানুষের কথায়। 
লেফটেন্যান্ট ড্যানিয়েল হার্ভাড স্নাতক, যার বাবা ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী। ডসন-ডাউনীর এই মামলাই হলো তার জীবনের প্রথম মামলা। তার কাজ ছিলো ডসন-ডাউনিকে অপরাধী প্রমাণ করা। কিন্তু তার সহকারী লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জো গ্যালওয়ের বলিষ্ঠতায় ড্যানি তার অব্স্থান থেকে সরে আসে। ড্যানিয়েল-গ্যালওয়ের দ্বন্দ্ব বা একই সাথে তাদের পরষ্পরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এগুলোও ছিলো এর মধ্যে। 

প্লট:
অ্যারন সরকিনের উপন্যাস থেকে অ্যাডাপ্ট করা সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন সরকিন নিজেই। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মিলিটারি নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার মধ্যে যে দ্বন্দ্ব তা-ই আসলে মূল উপজীব্য। এই দুটো বিষয় ফুটে উঠেছে সিভিলিয়ন থেকে মিলিটারিতে জয়েন করা টম ক্রুজ আর মিলিটারি ব্যাকগ্রাউন্ডের জ্যাক নিকলসনের অভিনয় আর সংলাপের মধ্য দিয়ে। 

কাস্টিং:
ক্রুজ সাহেবের মাস্টার পিস বলা যায়। উনি যে গোয়েন্দা ছাড়াও আইনজীবী হতে পারে এটা জানা ছিলো না। সাথে আছেন ডেমি মুর। ডেমি মুর সম্পর্কে তেমন জানি না। তবে তার অভিনয় আমার খারাপ লাগে নি। 

দ্য শাইনিং সাহেব জ্যাক নিকলসনের অসাধারণ অভিনয় তো আছেই। মনে হয়েছে পজিটিভ প্রটাগোনিস্টের চাইতে নেগেটিভরাই বেশি শক্তিশালী ও সক্রিয়। 

পরিচালক
চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন রবার্ট রেইনার। এই পরিচালকের খুব বেশি চলচ্চিত্র দেখা হয় নি। তবে যে তিনটা দেখলাম তা একেবারে মাস্টার পিস- উলফ অব ওয়াল স্ট্রিট কিংবা হোয়েন হ্যারি মেটস স্যালি আর আমার মোস্ট ফেভারেট স্লিপলেস ইন সিয়াটল। একেকটা একেক রকম মনে হয়। এটা তো আরো ভিন্ন। 

সংলাপ:
জ্যাক নিকলসনের অসাধারণ সব ডায়ালগ ছবির শক্তিশালী একটি দিক। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, নিকলসনের ‘ইউ কান্ট হ্যান্ডেল দ্য ট্রুথ’ হলো সেরা ১০০ উক্তির তালিকায় ২৯ তম। 




ক্যামেরা ও সম্পাদনা:
সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন রবার্ট রিচার্ডসন আর সম্পাদনায় রবার্ট লেইটন। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি নেভাল বেসকেই ছবিতে দেখানো হয়েছে গুয়েনতানামো বে হিসেবে। যদিও গুগল মামা জানানোর আগে আমার একবারও মনে হয় নি সেটা গুয়েনতানামো বে। রিচার্ডসনের সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো অসাধারণ। মন্তাজগুলো বিশেষ করে সান্টিয়াগোর চিঠির বিষয়গুলো, তার মৃত্যুদৃশ্য।